ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল হচ্ছে না ২০২২’র আগে

রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন হচ্ছে না!

rel duha-coxঅনলাইন :::

শেষ পর্যন্ত রেল যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। রেলপথেই আরামদায়ক ভ্রমণের মাধ্যমে সমুদ্রকন্যাকে উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। চলতি বছরই শুরু হচ্ছে স্বপ্নের দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণ কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী আগস্টেই দৃশ্যমান কাজ দেখা যেতে পারে রেলের এই ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পে। আশা করা হচ্ছে ২০২২ সাল নাগাদ ট্রেন চলবে এই রেলপথে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। লাইন অ্যালাইমেন্টও চূড়ান্ত। তবে এ প্রকল্পের রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইনটি আপাতত হচ্ছে না। এটি হবে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় ধাপে। সরেজমিন কক্সবাজার, চকোরিয়া, রামু, লোহাগাড়া ঘুরে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময় ২০১০ সালে। ওই বছরের জুলাই মাসে প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন পায়। সে সময় এর ব্যয় ধরা হয় ১৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-গুনধুম মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অর্থের সংস্থান না হওয়ায় ওই সময় প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও গত প্রায় ৭ বছরেও সরকার জমি অধিগ্রহণ ছাড়া তেমন কোনো কাজ করতে পারেনি। এ অবস্থায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছিল না। অর্থের সংস্থানের জন্য সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সরকারের এই ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের কাজে সহযোগিতার আগ্রহ দেখায়। এর পরপরই গত বছরের ১৯ এপ্রিল এ প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন দেয় সরকার। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটি মিটারগেজের পরিবর্তে পুরোপুরি ব্রডগেজে নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে আপাতত রেলপথটি নির্মাণ করা হবে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত। আর পরে রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় ধাপে। রেলসূত্র জানায়, সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা বা এক দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে উন্নয়ন সহযোগী এডিবি। এই রেলপথ যাবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকোরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ওপর দিয়ে। এসব উপজেলার যে এলাকা দিয়ে রেললাইন যাবে সেগুলোতে ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। সরকারের পক্ষ থেকেও দুই জেলা প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে ভূমি বাবদ অর্থ প্রায় ১৮২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলসূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮ কিলোমিটার মূল রেললাইন এবং ৩৯ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ ১৪০ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক রেলপথ নির্মাণ করা হবে। থাকবে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ১৪৫টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট। হাতি চলাচলের যেসব পথ রয়েছে সেগুলোর জন্য নির্মাণ করা হবে প্যাসেজ। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রেললাইন যে পথ দিয়ে রামু হয়ে কক্সবাজার যাবে সে পথে অন্তত ছয়টি সুনির্দিষ্ট পথ রয়েছে বন্যহাতি পারাপারের। এর বাইরেও আরও অন্তত পাঁচ-ছয়টি পথ রয়েছে। সবগুলো পথ চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে একজন বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তার পরামর্শ অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে প্যাসেজ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ৯টি স্টেশন। এগুলো নির্মাণ হবে দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকোরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামবাদ, রামু ও কক্সবাজারে। রামুতে হবে জংশন। আর কক্সবাজারের রেলস্টেশনে নির্মাণ করা হবে আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিং। স্টেশনটি হবে ঝিনুক আদলে। রেলসূত্র জানায়, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথটি নির্মাণ হবে দুটি লটে। প্রথম লটে নির্মাণ করা হবে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক। একই সঙ্গে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিগনালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৪১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় ধাপে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক এবং কক্সবাজার আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ করা হবে। এ ধাপের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের দাখিলকৃত দরপত্র মূল্যায়ন শেষ করে রেল বিভাগ মতামতের জন্য ১৭ মার্চ এডিবির কাছে পাঠিয়েছে। তাদের সম্মতি পাওয়া মাত্রই সরকার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে কার্যাদেশ দেবে। দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সম্মতি পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে। আশা করা হচ্ছে আগস্ট থেকে দৃশ্যমান কাজ দেখা যাবে একেবারে নতুন এ প্রকল্পে।

পাঠকের মতামত: